Join Our Whatsapp Group

Join Our Telegram Group

চলুন ঘুরে আসি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় দুবাই শহরে

চলুন ঘুরে আসি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় দুবাই শহরে
একশো সাতচল্লিশ তলা বাড়িটির একশো সাতাশ তলা পর্যন্ত ওঠা যায় টিকিট কেটে । এক মিনিটের মধ্যেই লিফট একশো সাতাশ তলায় পৌঁছে দেবে । ওপরে কাঁচের ব্যাল্কনিতে দাঁড়ালে পুরো দুবাই শহর দেখা যায় । সে এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য ।
এ যেন তারে জমিন পর । সন্ধ্যেবেলার আকাশ থেকে মরুশহরের আলোকসজ্জা দেখে এমনই মনে হবে । চারিদিক সুধুই আলোয় আলো । আকাশ যেন আর আকাশে নেই , মাটিতে নেমে এসেছে মনে হবে । বিশাল চওড়া রাস্তা ধরে অজস্র সুন্দর সুন্দর ঝাঁ চকচকে গাড়ি , বাস যাতায়াত করছে ।

দুবাই শহরে যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের দেশে বাসে চেপে আমরা টিকিট কাটি । দুবাই শহরে নিয়ম হল যাত্রীদের আইরে ভেন্ডিং মেশিনে টিকিট কেটে বাসে চাপতে হয় । দুবাই শহরে সারাদিন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবার জন্য যে কোনও মেট্রো স্টেশন থেকে একটা পাশ কিনে নিলেই হল । এতে মেট্রো ট্রেনে এবং বাসে যেকোন জায়গা থেকে যেকোনো জায়গা ফ্রি ।
দুবাই মেট্রোতে লাইন দেখা যায় না । কাঁচ দিয়ে ঢাকা । ট্রেন এলে স্বয়ংক্রিয় ঐ কাঁচের দরজা এবং ট্রেনের দরজা একসাথে খোলে । ট্রেনের কোন ড্রাইভার নেই । যেকোনো যাত্রী ট্রেনের একেবারে সামনে দাড়িয়ে ড্রাইভারের মতো সামনের লাইন ও ডাইনে বাঁয়ে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন । এ এক মনোরম অভিজ্ঞতা । অফিস টাইমে যাত্রী থাকে । দিনের অন্যান্য সময় যাত্রী খুবই কম । জ্বালানির দাম কম বলে প্রায় সবাই নিজের গাড়ি ব্যবহার করে ।


দুবাই কিছু দেখার বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় দুবাই মিউজিয়াম যার আগে নাম ছিল আল ফাহিদি । যা প্রায় দুশো বছর আগে সতেরশো সাতাশি খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়েছিল । যুদ্ধের প্রয়োজনে বানানো হলেও পরে বেশ কয়েক বছর এটা কারাগার হিসেবে ব্যবহার কয়া হত । ১৯৭১ সালে এটাকে মিউজিয়াম হিসাবে গড়ে তোলা হয় । পর্যটকরা এখানে দুবাইয়ের ইতিহাস জানতে পারবেন । বহুবছর আগে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা , পোশাক , খাদ্যাভ্যাস , তাদের দৈনন্দিন রুটিরোজগার এবং বোড়টোমাণে কিভাবে দুবাই ধাপে ধাপে পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক শহরে পরিণত হল তার পুরো ইতিহাস এখানে চাক্ষুষ করা যায় ।

Click Here – Sheikhs, Lies and Real Estate: The Untold Story of Dubai

বিশ্বের সবথেকে উঁচু বাড়ি বুর্জ আল খালিফা এখানেই অবস্থিত । বিখ্যাত দুবাই মলের ভেতর দিয়ে যেতে হয় । আধুনিক বিশ্বের এ এক বিস্ময়কর স্থাপত্য । একশ সাতচল্লিশ তলা বাড়িটির একশো সাতাশ তলা পর্যন্ত টিকিট কেটে ওঠা যায় । এখানেই রয়েছে পৃথিবীর দ্রুততম লিফট । যা একমিনিটের মধ্যেই একশ সাতাশ তলায় পৌঁছে দেবে । ওপরে গোটা বাড়িটি ঘিরে যে ব্যাল্কনি রয়েছে তা কাঁচের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা । ওপর থেকে পুরো দুবাই শহর দেখা যায় । সে এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য । নিচের দিকে তাকালে সত্তর আশি তলা বাড়িগুলোকেও ছোট ছোট বাড়ি বলে মনে হবে ।
এরপরে আসি দুবাই মলের কথায় , যা পৃথিবী বিখ্যাত । বিশ্বের বিখ্যাত বিখ্যাত ব্রান্ডের সব দোকান এখানে রয়েছে । তবে বেশিরভাগেরই দাম সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে । সারা পৃথিবীর ধনী মানুষেরা এখানে শপিং করতে আসেন । দেদার খরচ করেন । দুবাই মল ছাড়াও আরও কয়েকটি পৃথিবী বিখ্যাত মল রয়েছে এই শহরে । যেমন – এমিরেটস মল , ইবন বতুতা মল প্রভৃতি ।

AMAZON এবং FLIPKART এ কিছু কেনার আগে লেখাটি পড়ুন , নাহলে ঠকবেন !

দুবাই বেড়াতে আসবেন আর ডেজার্ট সাফারিতে যাবেন না , তা তো হয় না । মরুসফরে যাওয়ার জন্য জন্য আগেই সিট বুক করে নেবেন । ঠিক সময়েই মরুসফর যাওয়ার গাড়ি এসে পৌছবে আপনার কাছে । মরুভূমির মাঝ বরাবর চওড়া রাস্তা । দুধারে শুধুই বালি আর বালি । জনমানবশূন্য চারপাশ । । কেবল দেখতে পাবেন রাস্তার দ্রুত গতিতে চলা বড় বড় ট্রাক , বাস ও কতিপয় ছোট গাড়ি ।

চারিদিকে শুধুই বালির ছোট বড় পাহাড় দেখতে পাবেন । গাড়ির সিট বেল্ট অবশ্যই বেধে নেবেন । আপনার গাড়ি নরম ঝুরঝুরে বালির পাহাড়ের চুড়ায় উঠবে আর নামবে । নামবার সময় গাড়ি এমনই কাত হয়ে নামবে যেন মনে হবে এই বুঝি গাড়ি উল্টে গেল ।যাইহোক না কেন এখানে গাড়ি থামানো কোনমতেই সম্ভব নয় । এখানে গাড়ি থামানো মানেই চাকা বালির ভেতরে ঢুকে যাওয়া এবং মাঝ মরুভূমিতে পড়ে থাকা । তাই চালকেরা এখানে কখনই গাড়ি থামান না ।

এইসময় গাড়ির বাইরে খুব একটা কিছু দেখতে পাবেন না । কারন গাড়ির চাকার আঘাতে দুপাশের বালি ক্রমাগত উড়তে থাকে । এ এক অসাধারন অভিজ্ঞতা । এখানকার সূর্যাস্ত উপভোগ আর এক অনুভুতি । এরপরে আপনার গাড়ি পৌঁছাবে মরুভূমির মাঝে এক সুন্দর তাবুতে । বিশাল তাবুর ভিতরে মাঝখানে চারকোনা ষ্টেজ ঠিক আমাদের যাত্রাপালার মঞ্চের মত । চারপাশে আমাদের বসার জায়গা । এখানে বসার জন্য কোন চেয়ার নেই । মাটিতেই গদি পাতা রয়েছে । আর রয়েছে প্রচুর তাকিয়া । আর ছোট ছোট অল্প উচ্চতার টেবিল সঙ্গে খাদ্য ও নরম পানীয়ের অঢেল ব্যবস্থা ।

এখানে খাদ্যের পরিবেশনকারীরা অনেকেই বাংলাদেশী । দেশ থেকে বহুদূরে জীবিকার সন্ধানে এসেছেন । খেতে খেতে উপভোগ করতে পারেন আরবের বিখ্যাত বেলি ড্যান্স । তাবুর একপ্রান্তে অনেক গড়গড়া দেখতে পাবেন । অনেকেই ডিনারের পড়ে সেই গড়গড়ায় টান মারেন ।

তাবুর বাইরে সুসজ্জিত উঠ দেখতে পাবেন । চাইলে তাদের পিঠে চেপে ফটোস্যুট সেরে নিতে পারেন । বালির উপরে চলার উপযুক্ত স্কুটার দেখতে পাবেন । সেগুলি একটু চালিয়েও দেখতে পারেন । এককথায় বলা যায় মরুভূমির মাঝে মনোরঞ্জনের সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে । তবে সবকিছুই চড়া মুল্যে ।

আরবের বৈভব দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে আরবিয়ান গালফের উপর বিরাট পালতোলা নৌকার মত দাড়িয়ে থাকা বুর্জ আল আরব হোটেল । আমিরশাহির ধনকুবেরদের তৈরি এই হোটেল সম্ভবত বৈভবের শেষ কথা । সাধারন পর্যটকদের বাইরে থেকে এর সৌন্দর্য দেখেই শান্ত হয় । সামনের সমুদ্র সৈকত থেকে খুব ভালো দেখা যায় এই হোটেল । এখানে সমুদ্রের ধারে আরও একটি দৃষ্টিনন্দন হোটেল রয়েছে । সৈকতের নাম অনুসারে সেই হোটেলটির নাম জুমেইরা হোটেল ।

এখানকার আর একটি আকর্ষন হল জুমেইরা দ্বীপ । মানুষের তৈরি পাম গাছের আদলে বানানো গালফ সাগরের ওপরে দ্বীপ  । মেনল্যান্ড থেকে মোনোরেল চেপে একেবারে দ্বীপের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া যায় । দুতিনতে কামরা নিয়ে মোনোরেলগুলি তৈরি । ২০০৯ সাল থেকে  খুব ধীরগতির এই মোনোরেল মানুষের যাত্রাসঙ্গী । এই দ্বীপের একেবারে শেষে বিখ্যাত আলান্টিস হোটেল অবস্থিত । হোটেলের বাইরে রয়েছে চমৎকার সাজান বাগান ।এখানে এলে বোঝায় যাবে না যে দুবাই একটি মরুশহর । প্রচুর গাছ রয়েছে । আর সবই নিখুঁতভাবে সাজানো । এই আটলান্টিস হোটেলও আধুনিক স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন ।

দ্বীপ থেকে গালফ সাগরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে । মধ্যপ্রাচ্যের এই শহরে খুব সুন্দর করে সাজানো রয়েছে সবকিছু । ইউরোপ বা আমেরিকার যেকোনো শহরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে এই মরুশহর দুবাই । দুবাই শহরে কোথাও ভাঙা , পোড়া বা পুরনো জিনিস দেখতে পাবেন না । প্রত্যেকদিন প্রতিমুহুর্তে প্রত্যেকটি জিনিস পরিচ্ছন্ন করে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে । চুরি ডাকাতি নেই বললেই চলে ।

দুবাই শহর যেন মায়ানগরী । এখানে একবার গেলে আপনার বারবার যেতে ইচ্ছে করবেই ।

চলুন ঘুরে আসি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় দুবাই শহরে
Scroll to top